বাঁকুড়া দুর্গাপুর নতুন রেললাইন ২০২৫ অবশেষে কেন্দ্রের অনুমোদন পেল। দীর্ঘদিন ধরে দাবি চললেও এবার সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে রেল মন্ত্রক এগিয়ে এসেছে। দুর্গাপুর থেকে বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার নতুন রেলপথ তৈরির জন্য চূড়ান্ত অবস্থান জরিপে (Final Location Survey) অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র।
এই খবর সামনে আসতেই স্থানীয় মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার। কারণ বহুদিন ধরেই বাঁকুড়ার সাধারণ মানুষ দুর্গাপুরে চিকিৎসা, কর্মসংস্থান কিংবা ট্রেন ধরতে যান। এখনো পর্যন্ত তাদের ভরসা ছিল বাস পরিষেবার উপর। কিন্তু নতুন রেললাইন তৈরি হলে যাত্রা হবে দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং অনেকটাই আরামদায়ক।
কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রেলপথ?
বেলিয়াতোড়, বড়জোড়া, সোনামুখী, গঙ্গাজলঘাটির মতো অঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নিত্যপ্রয়োজনে দুর্গাপুরে যান। কেউ যান হাসপাতাল, কেউ যান কাজের খোঁজে, আবার কেউ যান দেশের অন্য শহরে ট্রেন ধরতে।
বাসে ভ্রমণ দীর্ঘ এবং খরচবহুল হওয়ায় সাধারণ মানুষ বহুবার রেল সংযোগের দাবি তুলেছিলেন। এই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ ও শহুরে মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।

সৌমিত্র খাঁর দীর্ঘ লড়াইয়ে সফলতা
বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বহুদিন ধরেই এই দাবি নিয়ে রেল মন্ত্রকের দরবার করেছেন। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও হয়েছিল। এবার রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সাংসদকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, চূড়ান্ত অবস্থান জরিপ (Final Location Survey) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এই জরিপে দেখা হবে—
- কোথায় কোথায় রেললাইন যাবে
- কোন এলাকায় স্টেশন তৈরি করা যেতে পারে
- জমির প্রয়োজন কতটা
- প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় কত হতে পারে
সব কিছু খুঁটিনাটি ভাবে মেপে নেওয়ার পরেই রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বসিত। বাঁকুড়ার বাসিন্দারা বলছেন, এতদিন বড়জোড়া কিংবা বেলিয়াতোড় থেকে দুর্গাপুর যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যেত। রেললাইন তৈরি হলে সেই সময় অর্ধেকেরও কম হবে।
অনেকেই মনে করছেন, শুধু যাতায়াতের সুবিধা নয়, নতুন ব্যবসা, পর্যটন, কর্মসংস্থান—সব দিকেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই রেলপথ। দুর্গাপুরের মতো শিল্পশহরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকলে ছোট শহরগুলির অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে।

চিকিৎসার ক্ষেত্রেও স্বস্তি
বাঁকুড়ায় উন্নত চিকিৎসার সুযোগ সীমিত। এজন্য বহু রোগী নিয়মিত দুর্গাপুরে আসতে বাধ্য হন। এখন বাসই একমাত্র ভরসা। অনেক সময় রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে সমস্যায় পড়তে হয়।
রেললাইন তৈরি হলে দ্রুত, আরামদায়ক ও কম খরচে দুর্গাপুরে পৌঁছানো যাবে। চিকিৎসার জন্য যাতায়াত হবে অনেক সহজ।
পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা
বাঁকুড়া জেলার অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে যেমন বিষ্ণুপুরের মন্দির, জয়পুরের বনাঞ্চল, সোনামুখীর পুরাতন মন্দির নগরী। অন্যদিকে দুর্গাপুর নিজেই একটি শিল্প ও শিক্ষার কেন্দ্র। দুই শহরের মধ্যে রেল যোগাযোগ হলে পর্যটক সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এতে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি
রেল মন্ত্রকের মতে, ছোট ছোট শহরকে বড় শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা দেশের উন্নয়নের অন্যতম লক্ষ্য। এভাবে মানুষ কম সময়ে, কম খরচে যাতায়াত করতে পারবেন। একইসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থানও বাড়বে।
এই প্রকল্প সফল হলে শুধু বাঁকুড়া-দুর্গাপুর নয়, ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন রেলপথের অনুমোদন আসতে পারে।
সামনে কী কী ধাপ?
- জরিপ সম্পূর্ণ করা হবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে।
- জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
- প্রাথমিক বাজেট তৈরি করে মন্ত্রক অনুমোদন দেবে।
- এরপরই শুরু হবে আসল নির্মাণকাজ।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে এই রেলপথ তৈরির কাজ শুরু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপসংহার
বাঁকুড়া দুর্গাপুর নতুন রেললাইন ২০২৫ শুধু একটি পরিবহন প্রকল্প নয়, বরং এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিশাল পরিবর্তন আনবে। যাতায়াত, চিকিৎসা, ব্যবসা, পর্যটন—সব ক্ষেত্রেই আসবে গতি।
স্থানীয় মানুষ যেমন আশায় বুক বাঁধছেন, তেমনি সরকারের পক্ষ থেকেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে এই প্রকল্প দ্রুত সম্পূর্ণ করার। আর তাই বলা যায়, বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রেলপথের স্বপ্ন এখন বাস্তবের দোরগোড়ায়।